ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে আটক দুই প্রতারকের স্বীকারোক্তিতে চাঞ্চ্যল্যকর চাঁদা আদায়ের তথ্য!

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে আটক হয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। শনিবার সন্ধ্যা ও রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার সাগর পাড়ে পুলিশের হাতে আটক হন ওই দুই প্রতারক।

আটক প্রতারকরা হচ্ছেন- সোহেল আহমদ শেখ (৩৮) ও গোলাম মোস্তফা শেখ (৩৬)। তারা সিরাজগঞ্জ সদরের দরগা রোড এলাকার বাসিন্দা। আটক সোহেল আহমদ শেখ হচ্ছেন ওই এলাকার মৃত করিম উদ্দিন শেখের ছেলে ও গোলাম মোস্তফা শেখ হচ্ছেন মো. শামশুল আলম শেখের ছেলে।

প্রতারকরা দীর্ঘদিন ধরেই মোবাইলে প্রতারণার মাধ্যমে দেশব্যাপী নানা কৌশলে চাঁদা আদায় করে আসছেন।

আটক হবার পর রাতে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন যে, বেগম রওশন এরশাদ এমপির নিকট থেকে ঈদুল আজহার আগে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম দিয়ে বেগম রওশনের নিকট থেকে টাকা আদায় করা হয়।

আটক প্রতারকদ্বয় নেত্রকোনার এমপি ওয়ারিশ উদ্দিন বেলাল (কর্নেল তাহেরের ভাই)’র কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এমনকি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীরের কাছ থেকেও তারা ৫ হাজার টাকা আদায় করেন।

কক্সবাজারে ডেরা পেতে এই প্রতারক চক্র আদায় করেছেন স্থানীয় একজন পৌর কাউন্সিলর এবং ব্যবসায়ীসহ আরো অনেকের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন- ‘সম্ভবত দেশব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তাদের দুইজনকে মাত্র কক্সবাজারে আটক করা সম্ভব হয়েছে। তারাই এখন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করছে তাদের অপরাধজনক জগতের নানা তথ্য।’

পুলিশ সুপার প্রতারক চক্রের সদস্যদেরকে আটকের নেপথ্য কাহিনীর বিবরণ দিয়ে বলেন, সর্বশেষ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নাম দিয়ে বায়োফার্মা নামের একটি ঔষধ কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চাঁদা দাবি করাই তাদের (প্রতারক) জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, শনিবার কক্সবাজারের বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন) সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান আমাকে চাঁদা দাবির তথ্যটি জানান।

বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি’র একটি নম্বর থেকে প্রতারকরা কম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ রোহিঙ্গা শিবিরের ত্রাণ কার্যক্রমের কথা বলে আমার নামে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।’

জেলা প্রশাসক বলেন, তিনি এ কথা শুনে নম্বরটি সংগ্রহ করে পুলিশ সুপারকে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ সুপার ওই নম্বরটি নিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতারকদ্বয়কে শনাক্ত করে দ্রুত হাতেনাতে আটক করেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান,  আটক প্রতারকদ্বয়কে রাতেই জেলা ডিবি পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।

গভীর রাতে জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া জানান,  প্রতারক সোহেল আহমদ শেখ ও গোলাম মোস্তফা শেখ মুখ খুলতে শুরু করেছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেগম রওশন এরশাদসহ অন্যান্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।

প্রতারকদ্বয় এমনও বলছেন যে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এ রকম ফাঁদ পেতে টাকা আদায় করছেন। যার তালিকা অনেক দীর্ঘ।

পাঠকের মতামত: